জন্মদানবিরোধ নিয়ে ভুল ধারণা

এক জন্মদানবিরোধী
0

 



(১)

- তাহলে আপনি কি শিশুদের ভালোবাসেন না?

- ভালোবাসি বলেই জন্মদানের বিরোধী আমি।

একজন শিশু জন্ম নিলো মানেই পুঁজিবাদী সমাজের দাস হয়ে গেলো।

প্রতিনিয়ত নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই, চাপিয়ে দেয়া দায়িত্বের বৃত্তে বন্দী হয়ে গেলো।

এই বৃত্ত থেকে মুক্তির একমাত্র পথ অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু!

বেশিরভাগ মানুষই শিশুদের হয়ত ভালোবাসেন৷ অথচ যারা ভালোবাসে বলেন তারাই শিশুদেরকে নিজেদের মনোরঞ্জনের জন্য, নিজের একাকীত্ব দূর করার জন্য, দাম্পত্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে, বৃদ্ধ বয়সে পিতামাতার নাতিনাতনির মুখ দেখার শখ পূরণ করতে ব্যবহার করেন।

তাহলে শিশুদের কে ভালোবাসেন?

জন্মদানবিরোধীরা নাকি যারা জন্ম দেয় তারা?

(২)

আপনার মা-বাবা আপনাকে জন্ম দিলো

অথচ আপনি কাউকে জন্ম দিবেন না?

কেউ আমাকে জন্ম দিয়েছে বলে আমারও কাউকে জন্ম দিতে হবে এমন নৈতিক বাধ্যবাধকতা নেই।

জন্ম দেওয়া যদি ভালো কিছু হতোও এজন্য তো সম্মান, কৃতজ্ঞতা এবং সেবা মাতা-পিতার পাওয়ার কথা।

নতুন করে সন্তান জন্ম দিলেই কি মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ হয়?

(৩)

আপনি কি ঈশ্বরে অবিশ্বাসী বলেই জন্মদানে বিরোধীতা করছেন?

যদি আপনি মনে করেন সন্তান জন্ম না দেওয়া ঈশ্বরের বিরোধীতা করা তাহলে কেনো আপনি যখন সন্তান চান না তখন জন্মনিরোধক (পিল, কনডম, সিমেন বাইরে ফেলা ইত্যাদি) ব্যবস্থা গ্রহণ করেন?

ধর্মবিশ্বাসটাও আপনাকে জন্মদানবিরোধী করতে পারে।

অধিকাংশ প্রধান ধর্মেই স্বর্গ/নরকের কথা উল্লেখ আছে৷

আপনি যদি বিশ্বাস করেন, পরকালে পাপ-পূণ্য হিসেব করে স্বর্গ/নরকে পাঠানো হয় তাহলে নিশ্চয় চাইবেন না আপনার সন্তান নরকে যাক৷

আপনি তখন নরক থেকে বাঁচাতে জোর করে এটা করতে দিবেন না, ওটা করতে বাধ্য করবেন। যা সন্তানের উপর রীতিমতো অত্যাচার৷ অপরদিকে তাকে তার মতো ছেড়ে দিলেও হয়ত আপনার ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী এমন কিছু করবে যা তাকে নরকবাসী করবে।

সন্তানকে কতদিন আগলে রাখতে পারবেন?

মৃত্যুর পরেও?

(ইসলাম ধর্মমতে, সন্তান যদি পাপ কাজ করে তবে তার শাস্তি আপনিও পাবেন। এ ভয়ে আপনি নিজেকে এবং সন্তানকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে নানা কঠোর কষ্টদায়ক বিধিনিষেধ সন্তানের উপর চাপিয়ে দেন। তবুও সন্তান ধর্মীয় দৃষ্টিতে বিপথে যেতে পারে। যার দায় স্রষ্টার কাছে আপনি এড়াতে পারবেন না৷)

(৪)

আপনি কি জীবন নিয়ে অসুখী বলে জন্মদানবিরোধী?

আপনার দৃষ্টিতে সবচেয়ে সুখী মানুষের কথা কল্পনা করুন।

তিনি কি

*জীবনে কখনো প্রিয়জন হারাননি?

*কখনোই রোগে ভোগেননি?

*চেয়ে না পাওয়ার যন্ত্রণা পাননি?

*সমাজ, পরিবার, দায়িত্বের বৃত্তে কখনো বন্দী অনুভব করেননি?

*কখনোই জীবনের বেড়াজাল থেকে পালাতে চাননি?

* জীবনে কখনোই হতাশাগ্রস্ত হননি?

*মৃত্যুভয়ে কখনোই উৎকন্ঠিত হননি?

*প্রিয়জনদের থেকে কখনোই কষ্ট পাননি?

*কখনো সবার মাঝে থেকেও একা অনুভব করার যন্ত্রণায় ভোগেননি?

যদি এসবের মধ্য দিয়ে তাকে প্রতিনিয়ত যেতে হয় তবে কি আপনি তাকে সুখী মানুষ বলবেন?

ধরুন, জন্ম নেওয়ার আগে অনুমতি নেওয়ার অপশন থাকতো আর তাকে (আপনার দৃষ্টিতে সুখী মানুষকে) বলা হতো জন্ম নিলে জীবদ্দশায় এসবের সম্মুখীন হতে হবে এবং জন্ম না নিলে এসবের মধ্য দিয়ে যেতে হবে না তখন সে কোন অপশন বেছে নিতো বলে আপনি মনে করেন?

(৫)

মানুষ জন্ম না নিলে পৃথিবী টিকবে কী করে?

মানুষ কি পৃথিবী সৃষ্টির আগে থেকেই ছিলো?

এককোটি বছর আগে তো মানুষ ছিলো না তখন কি পৃথিবী টেকে নি?

টিকে থাকা বলতে যদি পৃথিবীর পরিবেশ ভালো থাকা বোঝেন তাহলে তো মানুষই উল্টো পৃথিবীর পরিবেশ দূষিত করছে।

আপনার মতে, মানুষ তাহলে কিভাবে পৃথিবী টিকিয়ে রাখছে?!



লিখেছেন : মোহনা সেতু



🌺জন্মদানবিরোধী🌺 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=( ঠিক আছে ) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটটি / মোবাইল অ্যাপ 18 বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের জন্য নয়
Accept !
To Top