ভ্রূণের আকুতি

এক জন্মদানবিরোধী
0



আমি যে মুহূর্তে আট সপ্তাহের ভ্রূণ এবং উচ্চতায় ১.১ সে.মি সে মুহূর্তে জানি না আমি কোথায় আছি,  কোথায় যাবো, কীরূপে পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হবো। 
বিশ সপ্তাহের এসে আমি হাত - পা নাড়তে শিখেছি।   চেষ্টা করছি কারো সাথে যোগাযোগ করার।

আমার মা যখন তার মাকে নিশ্চিত করলেন,  পিরিয়ড না হবার এই সন্দেহই সঠিক তখন সেই মহিলা খোঁজ লাগালেন আমার বাবার। বাবাকে যখন পেলেন তখন তিনি বাবা হবার দায়িত্ব এড়াতে চাইলেন৷  মাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি চাও বাচ্চা পৃথিবীতে আসুক? মা চুপ ছিলেন বরাবরের মতই। কিন্তু আমি জানি তিনিও আমাকে চান না। আমি ভাবছি পর্যায়ক্রমে মতামত নেবার এই নাটকীয়তা শেষে আমার কাছে আসবেন। কিন্তু না এবারেও আমার মতামত কেউ জানতে চাইলো না,  আমার কথা ভাবনাতেও এলো না তাদের।  যেমনিভাবে আসেনি সঙ্গমের মুহূর্তেও।  অদ্ভুতভাবে শরীরটাই মূখ্য ছিলো।

 সবার মতামত নেবার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো আমায় তারা পৃথিবীতে আনবেন না।

দুটো মানুষ যখন নিজের খেয়াল খুশি মত অনাগতকে দুনিয়ায় আনতে চায় তখন পুরোটাই থাকে নিজেদের ভাবনার কথা।  তারা সঙ্গমে লিপ্ত হয় শরীরের চাহিদায়,  তারা সন্তান জন্ম দেয়ও বাবা মা হবার চাহিদায়।

বংশ পরম্পরায় নিজের জিন ছড়িয়ে দেওয়ার অদ্ভুত এক তাগিদ!

আমি যখন জড়ায়ুতে একটু করে বাড়ছি আমার মা তখন নিজের যোনীতে বড় নখওয়ালা আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিলেন আমাকে হিচরে টেনে বের করতে। আমাকে সৃষ্টির শুক্রদাতাও মাইনের অর্ধেক দিয়ে হোমিওপ্যাথিক,  গাছ গাছরার রস খাওয়ালেন যেনো আমি কোনো ভাবেই পৃথিবীতে না আসি। 

আমার আগামী পৃথিবী, আমার বিচরণের সেই গন্তব্য কী করে সুন্দর হতে পারে? 

যারা এখন সেখানে শনি, রবি, সোমবার করে জীবন কাটাচ্ছে তাদের কাছে কী জীবন সুন্দর মনে হয়?

কেবলমাত্র উঁচু পাহাড়,  নীল জলের সমুদ্র,  সবুজ ঘাস দেখে ঈশ্বরকে কী ধন্যবাদ দেওয়া যায়?

উদাসীন ঈশ্বরকে কি দয়ালু বলা যায়?

সমাজে, বিদ্যাপিঠে, পুস্তকে মা- বাবাকে নিয়ে নীতিবাক্যের যে সময়টা ছড়াছড়ি সেসময়টাতে আমি আসি আসি করছি।

আমি জানি না কী করে জয়ধ্বনি না তুলে চুপ থাকতে হয়। 

যেহেতু কন্ঠ আমার ধরে যাবে, শ্বাস আটকে যাবে সেহেতু সবাই জয়ধ্বনি দিতে থাকুক আমি চুপ থাকবো৷ 

চুপ থাকবো কারণ আমাকে কোনো কথাই বলতে দেওয়া হবেনা৷ 



আমি চাই না তাদের ভাষায় আমি কথা বলি, 

আমি চাই না তাদের  পরানো ধর্মের পোশাক আমি পরি,

আমি তাদের প্রথা আর রীতিনীতির চাপে দম বন্ধ করে মরতে চাই না,

রাষ্ট্র আর সমাজের কষাঘাতে আমি দলিতমথিত হতে চাই না।

দয়া করে আমাকে কেউ জন্ম না দিক, 

কারো শুক্রাণু,  ডিম্বানুর মিলনে আমি সত্ত্বাকে কোনো ধর্মের ঈশ্বর না সৃষ্টি করুক।




লিখেছেন : মোহনা সেতু



🌺জন্মদানবিরোধী🌺 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=( ঠিক আছে ) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটটি / মোবাইল অ্যাপ 18 বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের জন্য নয়
Accept !
To Top