অর্গাজম

এক জন্মদানবিরোধী
0




 "For an orgasm that lasts no more than nine seconds,Man is born to suffer for seventy years"

--Emil Cioran.

এই সূর্যের নিচে  সবকিছুই পৌনঃপুনিক
আর তোমরা সেই সব পুনরাবৃত্তি করো না,
যা তোমার কখনও চাও না,আশাও করো না....।

তোমরা ওদের জাগিও না,
শূন্যতার কোমল গর্ভে যারা পরম শান্তিতে আছে ।
তোমরা ওদের বিরক্ত করো না,
শূন্যতার কোমল গর্ভে যারা ঘুমিয়ে আছে ।
তোমরা ওদের নিয়ে এসো না এই বীভৎস নরকে,
শুধুই অবিরাম লড়ে যাওয়া অস্তিত্বের এই মহা সংগ্রামে,
তোমরা ওদের নিয়ে এসো না এই দাসের দুনিয়াতে,
তোমরা ওদের নিয়ে এসো না নির্দয় হত্যাকারী হতে,
তোমরা ওদের নিয়ে এসো না নির্দয় যুদ্ধাপরাধী হতে,
তোমরা ওদের নিয়ে এসো না শোষিত, নির্যাতিত হতে,
তোমরা ওদের নিয়ে এসো না শোষক,অত্যাচারী হতে,
তোমরা ওদের নিয়ে এসো না ধর্ষক হতে,
তোমরা ওদের নিয়ে এসো না ধর্ষিত হতে,
তোমরা ওদের নিয়ে এসো না উগ্রবাদী অজ্ঞ হতে,
তোমরা ওদের নিয়ে এসো না ঘৃণ্য হতে,
তোমরা ওদের নিয়ে এসো না আত্মঘাতী হতে,
তোমরা ওদের নিয়ে এসো না প্রতারক হতে,
হ্যাঁ, তোমরা  ওদের পরিচয় করিও ঐ ক্ষুধার্তের আর্তনাদের সাথে,
যে শিশু স্তনের রক্ত খেয়ে বেড়ে ওঠছে ।
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না অন্তহীন দুর্ভোগ, দুর্দশার সাথে,
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না চেঙ্গিসের
আগ্রাসনের চেয়ে ভয়াবহ বীভৎস আগ্রাসী অভাব-অনটনের সাথে ।
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না প্রতিহিংসা,
 বিশ্বাসঘাতকা,হিংসা-বিদ্বেষের মতো বর্বরতার সাথে ।
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না মৃত্যু যন্ত্রণার চেয়েও ভয়াবহ উপেক্ষা - অবহেলার সাথে ।
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না ঐ চৈত্রের দাবদাহের
 দাবানলের উত্তাপের মতো বিধ্বংসী হতাশার সাথে ।
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না চোখের জরায়ু ছিঁড়ে আসা আন্দিজপর্বতমালার চেয়েও ভারী উষ্ণ স্রোতের তীক্ষ্ণতার সাথে ।
যা কেউ কখনও গলতকরন করতে পারে না, পারে কি  ??
আর আমি তো নয়-ই, গিলতে গ্যালেই গলায় যেন এই নিকৃষ্ট দুনিয়ার সম
ব্যাস নিয়ে তীক্ষ্ণ শাবলের মতো ছ্যাঁত করে বিঁধে যায় ।
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না দুঃখ-কষ্টের অতলান্ত চূড়ায় ডুবে যাওয়া বেদনার্ত হৃদয়,
বিষন্নতার ঐন্দ্রজালিক অন্ধকারে  তড়পাতে-তড়পাতে
 ঈশ্বরের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছে যে বিমর্ষ দ্রোহী হৃদয় !
ক্লান্ত জীবনের বিরুদ্ধে বারবার সাক্ষ্য দিচ্ছে যে 
দুঃখী দ্রোহী তৃষ্ণার্ত হৃদর, ওর সাথে !
তুমি কি কখনও শুনেছো ? কখনও দেখেছো ?
কিভাবে বিশাল আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্রের উজ্জ্বলতার মতো এক বুক তীব্র হাহাকার নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জ্বলতে জ্বলতে
তিরতির করে ক্ষয় হতে থাকে একটা মুমূর্ষু শরনার্থী হৃদয় !?
কিংবা কিভাবে জীবনের সমস্তকিছুর প্রতি অনীহার বারুদে বুদবুদ ফুল্কিতে ভরে ওঠে ??
কিংবা কিভাবে প্রেম-ভালোবাসাহীনতার শৈত্য প্রবাহে ঢেকে যায় অন্তর্নিহিত আলো ?
 হয়ে ওঠে ঘৃণ্যতম সৃষ্টি ?
কিংবা কোন ভাষায় ওরা কথা বলে ?? জানো কি ??
কেউ কি কখনও জানতে পারে ?  পারে কি ??
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না ঐ গড অব মাউন্টেনের চেয়েও ভয়ংকর একাকিত্বের সাথে ।
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না,
 তোমরা ওদের পরিচয় করিও না ঐসব বীভৎসতার সাথে.......
ঐসব বিভীষিকাময় নৃশংসতার সাথে ।
যা তোমারা কখনও চাও না, কেউ কখনও চায় কি...??

তোমরা ওদের পরিচয় করিও না ছুটতে থাকা ঐ শরনার্থী শিশুদের অতলান্ত সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে ডুবতে থাকা রক্তিম সূর্যের সাথে ।
তোমরা ওদেরকে পরিচয় করিও না সমুদ্রের সোনালী বালুকণায় মানবসভ্যতার ইতিহাস বুকে নিয়ে নিষ্প্রাণ মুখ থুবড়ে শুয়ে থাকা ঐ আয়লান কুর্দির সাথে ।
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না ঐ পুঁজিবাদের চূড়ান্ত রূপের সাথে,
তোমরা ওদের পরিচয় করিও  না শ্রেণীভেদাভেদ-বর্ণবৈষম্যের ইতিহাসের সাথে,
কৃষকের আত্মহত্যার ইতিহাসের সাথে, 
পোড়ে যাওয়া শ্রমিকের যন্ত্রণার ইতিহাসের সাথে,
পাটকল- চিনিকল শ্রমিকদের হাহাকারের সাথে,
জেলে পাড়ার হাহাকারের সাথে, চা-শ্রমিকদের হাহাকারের সাথে,
আদিবাসীদের হাহাকারের সাথে, সংখ্যা লঘুদের আতঙ্কের সাথে,
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না ; হ্যাঁ ,
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না শ্রমিক আন্দোলনের সাথে,
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের সাথে,
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না স্বৈরাচার বিরোধী, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের সাথে ।
তোমরা ওদের দাঁড় করিও না ঐ রক্তচোষা বুলেটের সামনে ।
তোমরা ওদের দাঁড় করিও না মর্তলোক কাঁপানো
 আর কোন মহা শ্মশানের মহা যজ্ঞের সাথে ।
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না রক্তক্ষয়ী জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেম নামক মিথের সাথে ।
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না ঐ হিংস্র খুনী, ধর্ষক মিথ্যেবাদী ঈশ্বর নামক প্যারাসাইটিক ভাইরাসের সাথে ।
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না স্টকিওসমের সাথে,
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না নিহিলিজমের সাথে,
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না এনার্কিজমের সাথে,
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না সিনিসিজমের সাথে
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না এন্টিন্যাটালিজমের সাথে,
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না এক্সিসটেনশিয়ালিজমের সাথে,
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না এথিজমের সাথে,
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না থিজমের সাথে,
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না ম্যাটেরিয়ালিজমের সাথে,
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না সুফিজমের সাথে,
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না মার্ক্সিজমের সাথে,
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না এগ্নোস্টিসিজমের সাথে,
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না আইডিলিজমের সাথে,স্কেপ্টিসিজমের সাথে,
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না  অ্যাবসার্ডিজমের সাথে ।
বিশ্বাস করুন, বিশ্বাস করুন, বিশ্বাস করুন,,,
তাহলে,
ওরা আমৃত্যু এক তাপহীন আগুনের শিখাতে পুড়বে,
ওরা আমৃত্যু এক ক্ষতহীন ক্ষতের যন্ত্রনায় কাতরাবে,
ওরা আমৃত্যু এক দেয়ালহীন হাওয়া ঘরে ছটফট করবে,
ওরা মুক্তি চাইবে কিন্তু দরোজা পাবে না, আর ফিরতে পারবে না, ফিরতে পারবে না....
ওদের ভেতর জলপ্রপাতের মতো অনর্গল রক্তক্ষরণ চলতেই থাকবে কিন্তু তুমি কখনও তা দেখতে পাবে না....কখনও দেখতে পাবে না....
ওরা আত্মঘাতী হবে, ওরা আত্মঘাতী হবে....

তোমরা ওদের পরিচয় করিও না বদ্ধ ঘরে
 ঝুলে লম্বা হতে থাকা ঐ নিথর  নিঃস্তব্ধতার সাথে,
তোমরা ওদের পরিচয় করিও না ঐ ক্লান্ত প্রাণের সাথে;
যে বৌদ্ধের মতো ধীর পায়ে ভীর ঠেলে অস্পষ্ট নরক বিরবির করে আওড়াতে আওড়াতে হঠাৎ বেমালুম দাঁড়িয়ে যেতে চায় চলন্ত কোন বাস কিংবা ট্রেনের সামনে ।

আচ্ছা তোমরা কি কেউ বলতে পারো;
মৃত্যুর পথ কতোটা দীর্ঘ হয়??
যৌবন কিংবা ক্ষয়ে যাওয়া শরীরে মৃত্যুর এর জন্যে  অধীর হয়ে অপেক্ষা করা কতোটা বীভৎস যন্ত্রণার ? কতোটা অসহ্যকর পীড়াদায়ক ??
কতোটা হাসফাস করে বুকের ভেতর ?? কতোটা ভারী হয়ে আসে শ্বাস-প্রশ্বাস ??


আচ্ছা,
যদি আমার জন্ম না হতো, যদি তোমার জন্ম না হতো,
তাহলে এই পৃথিবীর কি কিছু আসতো-যেতো ??
বিরাট কোন ক্ষতি হতো, যা অপূরনীয় ?
তোমার আমার জন্ম-ই কি পৃথিবী-প্রানীকুলের শ্বাসরোধ করছে ?
তাছাড়া এই পৃথিবীর দুঃখ কি আমরা কিছুটাও কমাতে পেরেছি ?
নাকি প্রতিনিয়ত বাড়িয়েই চলেছি ??

হ্যাঁ, তোমরা ওদের নিয়ে এসো না এই বীভৎস বন্দী কারাগারে,
নিয়ে এসো না এই বীভৎস নরকে,
যে পাখির কিচিরমিচির বুঝে না, যে সমুদ্রের গোঙানি বুঝে না,
যে নদীর ভাষা বুঝে না, যে ফুলের ভাষা বুঝে না,
আদিম কমিউনিস্টের ভাষা বুঝে না, ঝরে পরা পাতার ভাষা বুঝে না,
পাহাড়ের ভাষা বুঝে না, শিশিরের ভাষা বুঝে না,
যে হৃদয়ের ভাষা বুঝে না, পাকস্থলীর মাতৃভাষা বুঝে না,
যে শুধুই ক্ষমতার পূজা করে,হুকুমের অপেক্ষায় থাকে,
যে শুধুই বুলেটে-বারুদে কথা বলে, যে শুধুই অনবরত গলা চেপে ধরে,
যে শুধুই বন্দুকের নলে রক্ত টেনে গলা ভেজায়, 
যে শুধুই হিংসা-বিদ্বেষ লালন করে ।।।

তোমরা ওদের নিয়ে এসো না, হ্যাঁ ; তোমরা ওদের নিয়ে এসো না,
নিয়ে এসো না এই বীভৎস নরকে ......

🌻লিখেছেন : জয়ন্ত দাস🌻

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=( ঠিক আছে ) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটটি / মোবাইল অ্যাপ 18 বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের জন্য নয়
Accept !
To Top