জন্মদানবিরোধ - ৮

এক জন্মদানবিরোধী
0


.

['শিশুকামীরা শিশুদের সোজা অর্থে ধর্ষণ করে আর জন্মদাতারা রূপকার্থে! দুটো ক্ষেত্রেই এর ফল ভুগতে হয় সারাজীবন আর মানসিক যন্ত্রণা মৃত্যুর আগে পর্যন্ত থাকে!' কথাটি যদিও একটি কুযুক্তি, (কেননা একটি জঘন্য অপরাধের সাথে অন্য কর্মকাণ্ডের তুলনা করলে জঘন্য অপরাধটিকে খাটো করা হয়) তবুও কিছু বিষয় একেবারে না ভাবলেও চলে না!]
.
প্রথমত, একজন শিশু যৌন নিপীড়ককে কেউ জন্ম দেয় না, সে আকাশ থেকে পড়ে - এটা নিশ্চয়ই আপনি মনে করেন না? আপনি হয়তো বলতে পারেন, কেউ 'শিশু যৌন নিপীড়ক' হয়ে উঠবে ভেবে সন্তান জন্ম দেয় না! তাহলে কিভাবে একজন শিশু যৌন নিপীড়ক হিসেবে গড়ে উঠে? 'একজন' বললে আসলে ব্যাপারটা খাটো করা হয়, এদেশের কথা বিবেচনা করলেও শিশু যৌন নিপীড়কের সংখ্যাটা বিশাল! (সারা পৃথিবীতে, এমনকি উন্নত দেশেও সংখ্যাটা ভয়াবহ) এই বিশাল পরিমাণ মানুষ শিশু যৌন নিপীড়ক হয়ে ওঠাকে নিশ্চয়ই আপনি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে চাইবেন না?
.
একজন মানুষ বিভিন্ন কারণে অপরাধী হয়ে উঠতে পারে! যারা আত্মসমালোচনা করতে অনিচ্ছুক তারা হয়তো অপরাধীর জন্মের পেছনে বংশগতির প্রভাব অস্বীকার করতে চাইবে, কিন্তু পিতামাতার আচরণের সাথে মিল আছে বলেই প্রায়ই 'রক্তের দোষ' বলে একটা কথা বলা হয়! সরাসরি জন্মগত না হলেও শিশুর বিকাশকালীন সময়ে শিশুর অনুকরণশীল বৈশিষ্ট্যের জন্য পিতামাতার অনেক খারাপ বৈশিষ্ট্য সন্তান পায়। সেসব অস্বীকার করলে, বাস্তবতাকে অস্বীকার করা হয়। দায় এড়িয়ে কোনো সমস্যার সমাধান আশা করা বোকামো।
.
আপনি যদি নিশ্চিত হয়ে থাকেন যে আপনার মধ্যে এমন বৈশিষ্ট্য ছিলো না, তাহলে সন্তানের মধ্যে এটা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অন্যের থেকে শিখেই আসবে। আপনি সন্তানকে সঠিক শিক্ষা দিতে না পারা কিংবা আগলে রাখার ব্যর্থতা অস্বীকার করলেই বাস্তবতা বদলে যায় না! কিছু ক্ষেত্রে শোনা যায়, অন্যের হাতে নিপীড়নের শিকার হয়ে পরবর্তীতে কেউ কেউ নিজেই যৌন নিপীড়ক হয়ে উঠছে! (এটাকে সম্ভবত স্যাডিজম বলা যায়, যদিও অন্যকে কষ্ট দিয়ে আনন্দলাভকে স্যাডিজম বলা হয়) এক্ষেত্রে আপনার দায় দ্বিগুণ, আপনি সন্তানকে নিপীড়নের হাত থেকে বাঁচাতে পারেননি আবার নিপীড়ক হয়ে ওঠা আটকাতে পারেননি। আর আপনি যদি দাবি করেন, আপনার নিজের কোনো ত্রুটি ছিলো না, আপনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করার পরেও শিশুকে রক্ষা বা যৌন নিপীড়ক হয়ে ওঠা আটকানো সম্ভব হয়নি (অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় শিশু যৌন নিপীড়নকারীদেরকে তাদের বাবা-মা একেবারে নিষ্পাপ মনে করে, নিজেরাই জানতে পারে না তাদের অগোচরে কি জঘন্য মানসিকতা গড়ে উঠেছে সন্তানের) , তাহলে কেন এত অনিশ্চয়তা নিয়ে কাউকে জন্ম দিচ্ছেন?  
.
এবার আসুন, কিভাবে জন্মদাতারা রূপকার্থে শিশু নিপীড়ক? একজন শিশু নিপীড়ক কেবল তার স্বার্থের কথা ভাবে, এর ফলে ভিক্টিম শিশুর উপর কি ভয়াবহ প্রভাব পড়বে তা ভাবে না, কতজন জন্মদাতা সন্তান জন্ম দেয়ার সময় শিশুর উপর সারাজীবন কি কি যন্ত্রণা আসতে পারে সেটার কথা ভাবে? (শিশুকে নিজের ইচ্ছে ও স্বপ্ন পূরণের, একাকীত্ব দূর করার যন্ত্র ভাবা বিশাল সংখ্যক বাবা-মায়ের কথা নাইবা বললাম!) একজন শিশু নিপীড়ক শিশুকে নিপীড়নের জন্য বেছে নেয় কেননা শিশু শক্ত প্রতিবাদ করতে জানে না, ভয় পায়! একজন শিশুকে জন্ম দেয়ার সময় শিশু মোটেই প্রতিবাদ জানাতে পারে না, একজন শিশুকে পুতুলের মতো বাবা-মা যেমন নাচায় তেমন নাচতে শিশুটি অস্বীকৃতি জানাতে পারে না, তার অনিচ্ছা থাকলেও সে প্রতিবাদ জানাতে পারে না, মুক্তি লাভ করার উপায় থাকে না, বাবা-মায়ের মারধোর - বকাঝকার জন্য ভয়ে মুখ ফুটে তার ইচ্ছের কথা, যন্ত্রণার কথা জানাতে পারে না। (অনেক বাবা-মা তো 'আমি একবার চোখ বড় করলেই ভয় পেয়ে যায়', 'আমি ডানে যেতে বললে ডানে যায়' এমন জঘন্য নিপীড়নের কথা বলে গর্ববোধও করে!)
.
একজন যৌন নিপীড়ক শিশুকে চকলেটের লোভ দেখিয়ে, বিভিন্ন কথায় মানসিক প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তার স্বার্থ আদায় করে! বাবা-মা সন্তানকে তার ইচ্ছের মতো করে গড়ে তুলতে এটা-ওটা দেয়ার লোভ দেখায়, আবার কিছু হলেই সন্তানের তার প্রতি আবেগী নির্ভরশীলতাকে ব্যবহার করে আবেগী ব্ল্যাকমেইলিংয়েরও আশ্রয় নেয়! একজন শিশু নিপীড়ক তার ব্যক্তিগত জীবনের হতাশা, অপ্রাপ্তি এর সাথে সংশ্লিষ্টতাহীন শিশুর উপর চাপায়! বাবা-মা তাদের সাংসারিক, দাম্পত্য, সমাজিক, কর্মস্থলের নানা হতাশা, অপ্রাপ্তি কি সন্তানের উপর চাপায় না? অনেক বাবা-মা সন্তানের মাধ্যমে বেহেশত লাভের লোভে সন্তানকে কওমী মাদ্রাসায় দেয়, আত্মীয়-প্রতিবেশীর সাথে ঝামেলা এড়াতে সন্তান তাদের কারো হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হলেও সেটা চেপে যেতে বলে, এরপরেও এমন বাবা-মাকে 'নিঃস্বার্থ' বলা যায় কি?
.
একজন যৌন নিপীড়কের তুচ্ছ স্বার্থে একটা শিশু সারাজীবন মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যায়, অনেকে কোনোভাবেই বের হতে পারে না। বাবা-মা একটা শিশুকে জন্ম দেয়ার পর যেসব যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, মৃত্যু ছাড়া সেসব থেকে স্থায়ী মুক্তি পাওয়া সম্ভব কি?

লিখেছেন : 🌹Shams Arko🌹 

শামস অর্কের ব্লগ



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=( ঠিক আছে ) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটটি / মোবাইল অ্যাপ 18 বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের জন্য নয়
Accept !
To Top