উটিামখ

এক জন্মদানবিরোধী
0


.
পৃথিবী কি দিনে দিনে আরো বাসযোগ্য হচ্ছে বা হবে? আপনি যদি উটপাখির মতো বালির নিচে মাথা লুকিয়ে বাস্তবতা অস্বীকার না করেন তাহলে নিশ্চয়ই উপলব্ধি করতে পারবেন- পৃথিবীর জীবের জন্য অত্যাবশকীয় বায়ু, পানি প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে, প্লাস্টিকের বর্ধমান ব্যবহার মাটিকেও করছে দূষিত, মানুষ কর্তৃক নির্বিচার বন ও প্রাণী ধ্বংসে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে, প্রাকৃতিক জ্বালানি সহ অন্যান্য সম্পদ ক্রমেই ফুরিয়ে যাচ্ছে! আর আগ্নেয়াস্ত্র, রাসায়নিক অস্ত্র, জীবাণু অস্ত্র, পারমানবিক অস্ত্র সহ নানা মারণাস্ত্র ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে যেগুলোর ব্যবহার যেকোনো সময় মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
.
আপনি সমুদ্রের তীর থেকে দু-একজনের প্লাস্টিক কুড়ানো দেখে পরিবেশ সুন্দর হয়ে যাচ্ছে ভেবে আনন্দিত হতেই পারেন, কিন্তু বাস্তবতা হলো যে পরিমাণ প্লাস্টিক কুড়ানো দেখে আপনি আনন্দিত হচ্ছেন তার চেয়ে বহুগুণ প্লাস্টিক বর্জ্য আপনি নিজেই সৃষ্টি করছেন! এমনিতেই আপনি যে অন্ধ জৈবিক নকশায় নির্মিত তা আপনাকে ইতিবাচকতার চশমা পরিয়ে রাখে, তার উপর পুঁজিবাদ-ভোগবাদ-জাতীয়তাবাদ-সাম্রাজ্যবাদ-রাজতন্ত্র-ধর্ম-সমাজতন্ত্র এসব টিকিয়ে রাখতে সুবিধাভোগীরা আপনাকে কঠিন বাস্তবতা ভুলিয়ে নিজের স্বার্থ নিয়ে ভাবতেই উদ্বুদ্ধ করে। আর আপনি যদি কেবল নিজের স্বার্থের কথাই ভাবেন, তাহলে এই 'জন্মদানবিরোধ' লেখাটি আপনার জন্য নয়!
.
পৃথিবী ক্রমশ বসবাসের অযোগ্য হবে এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আপনার ও এ যুগের মানুষদের অবিবেচক কর্মকাণ্ডের ফলে নিকট ভবিষ্যতের প্রজন্মই ভুগবে। আজও পৃথিবীর একটা বড় অংশের মানুষ সুপেয় পানি পাচ্ছে না, খাবার না পেয়ে রাতে ঘুমোচ্ছে, ভোগবাদীদের ভোগের ফলে সৃষ্টি হওয়া পরিবেশ বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে, সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধবাজদের সৃষ্ট যুদ্ধের নির্মমতার শিকার হচ্ছে,  তাদের কথা যদি আপনি ভাবা বাদ দিয়ে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তাহলে এ লেখা আপনার জন্য নয়! 'আমার দেশে তো যুদ্ধ হচ্ছে না', 'আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে, অন্যের সন্তান মরুক ধুঁকে কি যায় তাতে!' এমন মানসিকতার লোকজনদের জন্যেও এ লেখাটি নয়।
আশাবাদী হওয়া দোষের নয়, বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন আছে। তবে নিজের আশার জন্য ভবিষ্যত মানুষদের বিপর্যয়ে ফেলাটা অবশ্যই দোষের!
.
সুকান্ত ভট্টাচার্য ২১ বছরেরও কম বয়সে উপলব্ধি করেছিলেন এ পৃথিবী নবজাতকের বাসযোগ্য নয়, তিনি অঙ্গীকার রাখতে না পারলেও অন্তত নবজাতকের জন্য পৃথিবী বাসযোগ্য করার কথা ভেবেছিলেন। সমরেশ মজুমদারের 'গর্ভধারিণী' উপন্যাসে জয়িতা একটি বাসযোগ্য সমাজ গড়ে তোলার পরই সন্তান জন্ম দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো! কিন্তু বাস্তবে বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলা কি এতই সহজ? যদি এতই সহজ হতো, আমাদের পূর্বপুরুষেরা কেন আমাদের অধিকতর বাসযোগ্য পৃথিবী দিতে পারেননি? তারা পারেনি বলে আমরা পারবো না, চেষ্টা করবো না এমনটা বলছি না, কিন্তু সে চেষ্টায় সফল হওয়ার আগেই কেন ক্রমে বসবাস-অযোগ্য হওয়া একটি পৃথিবীতে কাউকে জন্ম দিচ্ছি আমরা? আমাদের সন্তানেরা পৃথিবীকে আরো সুন্দর করবে এমন আশা আমরা তখনই করতে পারতাম যখন আমরা অতীতের চেয়ে পৃথিবীকে অধিক বাসযোগ্য করে তুলতে পারতাম!
.
জন্মদান একেবারে স্বাভাবিক - প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, এটাকে অস্বীকার করা তো প্রকৃতির বিরুদ্ধে যাওয়া! মানুষ অন্ধ জৈবিক প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্কের বিকাশের ফলে যন্ত্রণা যেভাবে উপলব্ধি করতে শিখেছে, তা অন্য অনেক প্রাণী উপলব্ধি করতে শেখেনি। একটা বাঘ বা সিংহ যন্ত্রণায় ছটফট করা হরিণকে জীবিত অবস্থায় তৃপ্তি নিয়ে খেতে পারলেও মানুষ সেটা পারে না, কেননা মানুষ যন্ত্রণাটা উপলব্ধি করে! কিন্তু মানুষের সমস্যা হলো তারা ঐ হরিণকেই যন্ত্রণা দিয়ে তার অগোচরে হত্যা করে তাকে মাংস খেতে বললে সে দ্বিধা করে না! ঠিক তেমনিভাবে মানুষ তার সন্তানের বাহ্যিক যন্ত্রণাটুকু সহ্য করতে পারে না অথচ তাদের অগোচরে যে মানসিক যন্ত্রণায় ভোগে সন্তান, সেটা তাদের ভাবনাতেই  আসে না! কিন্তু মানুষ হয়ে যখন জন্মেছি, ভাবনার মতো মস্তিষ্ক যখন পেয়েছি, তখন আমাদের ভাবাটা কেবল উচিতই নয়, একপ্রকার কর্তব্যও বটে।

লিখেছেন : 🌹Shams Arko🌹 

শামস অর্কের ব্লগ



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=( ঠিক আছে ) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটটি / মোবাইল অ্যাপ 18 বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের জন্য নয়
Accept !
To Top