জন্মদানবিরোধ - ১০

এক জন্মদানবিরোধী
0


.
জন্মদানের বিরোধিতা করলে সবচেয়ে বেশি যেটা শুনতে হয় সেটা হচ্ছে, 'জীবন যদি এতই যন্ত্রণার হয়, আর আপনি যদি সন্তান না রাখতে চান, তাহলে আপনি এখনই মরে যাচ্ছেন না কেন?' জন্মদানবিরোধ আর আত্মহত্যার সমর্থন এক নয়! জন্মদানবিরোধের একটি প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি। আপনি নিজে না চাইলেও জীবন পেয়েছেন আর সে জীবনে নিজের সাথে জড়িয়ে ফেলেছেন আরো অনেকের জীবন, এ মুহূর্তে আপনি মরে যাওয়া আপনার প্রিয়জনদের যন্ত্রণা দিবে, সেটা স্বেচ্ছায় করা জন্মদানবিরোধের সাথে সাংঘর্ষিক! 
আপনি হয়তো বলবেন, জীবনকে এত যন্ত্রণার মনে করার পরেও যে মরতে চাইছেন না, এটাও কি প্রমাণ করে না বেঁচে থাকা আকাঙ্ক্ষিত? আপনাকে এটা বুঝতে হলে ভাবতে হবে জহির রায়হানের উপন্যাস 'হাজার বছর ধরে'তে বউ পেটানো আবুলের বউ প্রতিনিয়ত নির্মমভাবে মার খেয়েও গলায় ফাঁস দিতে গিয়েও কেন দেয় না? আমরা জৈবিকভাবে এমনভাবে গড়ে উঠেছি যে আমাদের কেবল ইতিবাচক ব্যাপারগুলো মনে থাকে, নেতিবাচকতাকে ভুলে অন্ধ প্রকৃতির আরোপিত বংশ রক্ষার দায়িত্ব পালনই স্বাভাবিক মনে হয়, জীবনের যন্ত্রণা আমাদের বিবেচনায় আসে না! (যদিও জীবনের জটিলতাকে নেতিবাচকও বলা যায়, আমরা আমাদের অনেক ইতিবাচক ব্যাপার থাকার পরেও নেতিবাচক তুচ্ছ ব্যাপার নিয়েই হতাশা,যন্ত্রণায় ভুগি!)
.
জন্মদানবিরোধী অনেকের কথা বলার ধরনে মনে হয়, জীবনে কেবল যন্ত্রণা-ভোগান্তিই আছে, কোনো সুখ নেই! কিন্তু বাস্তবতা তো সেটা নয়, যন্ত্রণার পাশাপাশি প্রত্যেক মানুষের জীবনে অল্প হোক বা বেশি, সুখ থাকেই। যদিও কিছু দুঃখ - যন্ত্রণার সমস্ত সুখ মাটি করার ক্ষমতা থাকে, কিছু যন্ত্রণা এড়ানোর উপায় থাকে না এবং সুখ খুব কম ক্ষেত্রেই দীর্ঘস্থায়ী হয়! আমাদের অনেকেই নিজেদের পরিস্থিতিকে মেনে নিয়ে সান্ত্বনা হিসেবে বলি সুখে আছি কিংবা আমার চেয়েও কষ্টে আছে এমন কাউকে দেখে (জঘন্য)  আপেক্ষিক সুখ-বিভ্রমে ভুগি! এসবকিছু বাদ দিয়ে যদি ভাবি আমার জীবন পরিপূর্ণ সুখী, তবুও সন্তান জন্ম দেয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা আমার নেই কেননা যার অস্তিত্ব নেই তাকে অস্তিত্বে না আনা কোনোভাবেই খারাপ নয় বরং জীবনের জটিলতা-যন্ত্রণার কথা বিবেচনা করলে এমন সিদ্ধান্ত নেয়াটা ভালো বটে!
.
জন্মদানবিরোধ যেহেতু যন্ত্রণা এড়ানোর জন্যে করা হয় তাই প্রশ্ন আসবেই অন্যান্য অনুভূতিশীল প্রাণীকে জীবনযন্ত্রণা থেকে কে মুক্তি দিবে? একটা হরিণকে জীবিত অবস্থায় যন্ত্রণা দিয়ে বাঘ খাবে, সে যন্ত্রণা থেকে তাকে কে মুক্তি দিবে? সে বিষয়ে ভাবা যেতে পারে কিন্তু সত্য হলো এই যে, এ পৃথিবীতে প্রাকৃতিকভাবে প্রাণীদের যে যন্ত্রণা পেতে হয়, তার চেয়ে বহুগুণ নির্মম যন্ত্রণা মানুষের হাতেই পেতে হয়! তাই, মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি না করা সার্বিকভাবে কোনো খারাপ সিদ্ধান্ত নয়! জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ পৃথিবীতে নতুন জনসংখ্যা যোগ না করাই হতে পারে পৃথিবীর আলো-জল-মাটিতে বেড়ে ওঠার কৃতজ্ঞতার প্রকাশ!
.
অনেকে বলবেন জন্মদান প্রাকৃতিক, জন্মদানের বিরোধিতা করা অপ্রাকৃতিক! অথচ তারা নিজেরাও জানে বছর বছর একের পর এক বাচ্চা জন্ম হওয়া প্রাকৃতিক কিন্তু তারাই জন্মবিরোধ-পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রকৃতির বিরোধিতা করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত! কেবল নিজের স্বার্থে যখন সন্তান নেওয়ার প্রয়োজন হয়, তখনই তারা প্রকৃতিপুজক হয়ে যান! প্রকৃতি শুধু মানুষকে জন্মদানের ক্ষমতা দেয়নি, সেটা রোধ করার উপায় বের করার মতো এবং জন্ম দেয়ার নৈতিকতা সহ অন্যান্য দিক ভাবার মতো মস্তিষ্কও দিয়েছেন। প্রকৃতির দান মস্তিষ্ক ব্যবহার করে প্রকৃতির জন্মচক্রের বিরোধিতা অনেকটা রাজা হিসেবে শোষণের উত্তরাধিকার পেয়েও শোষণের রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘোষণা করারই মতো!
.
আমি যে এত কথা বলছি সেটা আমার পরিস্থিতি, অতীত, বর্তমান, উপলব্ধি সহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে একপাক্ষিক/ভুল হতেও পারে! কিন্তু জন্মদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একটু হলেও ভাবা উচিত সবারই! মস্তিষ্কের ব্যবহার না করে কেবল নিজ স্বার্থে, সমাজের কথা শোনার ভয়ে জন্মদান মানুষের মস্তিষ্কেরই অপমান!

লিখেছেন : 🌹Shams Arko🌹 

শামস অর্কের ব্লগ



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=( ঠিক আছে ) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটটি / মোবাইল অ্যাপ 18 বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের জন্য নয়
Accept !
To Top