জন্মদানবিরোধ - ৯

এক জন্মদানবিরোধী
0


.
অনেকেই ভাবেন, আমার সন্তান না থাকলে বৃদ্ধ কালে আমাকে কে দেখবে? বৃদ্ধ কালে আমি একা হয়ে যাবো! কিন্তু একটা কঠিন বাস্তবতা হলো যত চেষ্টাই করা হোক, বৃদ্ধকালে মানুষ একা হয়ে যায়! মানুষ অন্য মানুষের অভাবে একা হয় না, মানুষ একা হয় তার মনের কথা শুনে উপলব্ধি করবে এমন মানুষের অভাবে! অথচ জীবন চলার পথে মানুষ এমন মানুষগুলোকেই হারিয়ে ফেলে! আর আপনি যদি এমন সৌভাগ্যবান হয়ে থাকেন যে আপনার মনের মানুষ বেঁচে থাকবে আপনার সাথে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত, তাহলে আপনি বৃদ্ধ কালের একাকীত্ব থেকে রক্ষা পাবেন। আপনার সন্তান ভিন্ন যুগের, ভিন্ন বয়সের মানুষ, সে কেবল আপনার অসহায় অবস্থায় সেবা করে যেতে পারবে, আপনার একাকীত্ব দূর করতে পারবে না! আর মানুষ একা হয়ে পড়লে কিছু বুঝতে চায় না, আপনার সন্তানের জীবনে আপনিই একমাত্র ব্যক্তি নন, তবুও মন চাইবে সে কেবল আপনার পাশেই থাকুক সবসময়!
.
এখানে একটা ব্যাপার লক্ষণীয়, আপনি বৃদ্ধকালে অসহায় হয়ে পড়বেন, সেজন্য সন্তানের সেবার প্রয়োজন হবে, ঠিক একইভাবে আপনার সন্তানও বৃদ্ধ হবে, তারও সেবার জন্য সন্তান প্রয়োজন হবে, এভাবে চলতেই থাকবে। এভাবে কিন্তু কোনো সমস্যার সমাধান হয় না, অনন্ত চক্র কোনো সমাধান নয়! আপনি আপনার অসহায়ত্ব আরেকজনের উপর চাপাচ্ছেন, সমাধান করছেন না! আপনাকে আপনার বাবা-মা আপনি না চাইতেও কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ করেছে, সেই কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে আপনি বৃদ্ধ বয়সে তাদের সেবা করবেন এটা ভালো কথা কিন্তু কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে আপনিও সন্তান জন্ম দিয়ে নিজের অসহায় সময়ের সহায় হওয়ার জন্য একটি নতুন জীবন তৈরির বাধ্যবাধকতা আপনার আদৌ আছে কি? এর চেয়ে আপনার অনাগত সন্তানকে এই অসহায়ত্ব-একাকীত্ব-যন্ত্রণার চক্র থেকে মুক্তি দেয়ার কথা ভাবাই কি উত্তম নয়? বৃদ্ধকালীন অসহায়ত্বের সহায় হিসেবে সন্তান জন্মদান সমাধান হলে পৃথিবীতে এত বৃদ্ধাশ্রম থাকতো না, এত পরিবারে বাবা-মা অবহেলা পেতে হতো না! আবার যাদের সন্তান হয় না কিংবা যারা বৃদ্ধ হওয়ার আগেই তাদের সন্তান মারা যায় তাদের ক্ষেত্রেও জন্মদান বৃদ্ধকালীন অসহায়ত্বের সমাধান হতে পারে না!
.
জন্ম দিলেই, উপযুক্ত শিক্ষা দিলেই সন্তান বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবাকে দেখাশোনা করবে, এমনটা কি সবসময় হয়? কোনো বাবা-মা ই কি তার সন্তানকে শিক্ষা দেয় বৃদ্ধ বয়সে তাকে অবহেলা করতে? বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে যে নিবেদিতপ্রাণ মানুষেরা বৃদ্ধদের সাহায্য করে তারা কি তাদের সন্তান? তাহলে বৃদ্ধ বয়সে সেবা পাওয়ার জন্য সন্তান হতেই হবে এমনটা আবশ্যক কি? বরং সন্তান থাকার পরেও বৃদ্ধ বয়সে অবহেলা পাওয়া, বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে বাধ্য হওয়া, একাকীত্ব এসব অনেক বেশি যন্ত্রণা দেয়, বৃদ্ধাশ্রমে পরম যত্নে রাখা হলেও তাই এসব লোকদের অন্তর প্রতিনিয়ত কাঁদে!
.
আসলে ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণা আমাদের এ সর্বনাশের মূলে রয়েছে। আপনি যদি শিশুদের ভালোবাসেন, তাহলে অনাথ একটি শিশুর কেন দায়িত্ব নিচ্ছেন না? নিজেই নতুন একটি শিশুর জন্ম দিতে হবে কেন? আপনার সন্তানের যত্ন প্রয়োজন হলে, অনাথ শিশুটির কি যত্নের প্রয়োজন নেই? একটি শিশুর দায়িত্ব নিলে, তাকে ভালোবাসলে, সে কি বিনিময়ে আপনাকে ভালোবাসবে না, আপনার পাশে থাকবে না? আর থাকতেই বা হবে কেন? নিঃস্বার্থভাবে কারো জন্য কিছু করতে পারার আনন্দই কম প্রাপ্তি কোথায়? পৃথিবীতে কোটি কোটি শিশু আশ্রয়হীন, অনাদরে বেড়ে উঠছে, তাদের কথা একদম না ভেবে নতুন একটি শিশুর জন্ম দেয়ায় নিঃস্বার্থতা কোথায়? বিদ্যমান দুঃখ দূর করার আগে নতুন করে সুখের অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও শিশু জন্ম দেয়া কেবল চোখ বন্ধ করে নিজের স্বার্থের কথা ভাবার মতোই! (নিজের সন্তানের স্বার্থও নয়, কেননা অস্তিত্বহীন কারো স্বার্থ থাকে না।)
.
বিচার প্রক্রিয়ায় একটা কথা বলা হয়, 'হাজার অপরাধী ছাড়া পেয়ে যাক, তবু যেন একজনও নিরপরাধী শাস্তি না পায়!' তেমনি কোটি কোটি সন্তান যাদের অস্তিত্ব নেই কিন্তু জন্ম নিলে সুখী হতো, তাদের জন্ম না হলেও কিছুই যায় আসে না কিন্তু একটি সন্তানকেও বিনা অপরাধে (পূর্বজন্মের পাপ নামক গাঁজাখোরী তত্ত্বের পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই) অস্তিত্বের যন্ত্রণা ভোগ করতে জন্ম দেয়া নৈতিক হতে পারে না।


লিখেছেন : 🌹Shams Arko🌹 

শামস অর্কের ব্লগ



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=( ঠিক আছে ) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটটি / মোবাইল অ্যাপ 18 বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের জন্য নয়
Accept !
To Top