চাপানো জীবন, চয়েজ/বাছাই ও জন্মদানবিরোধ

এক জন্মদানবিরোধী
0



 কারো উপর কিছু চাপিয়ে দেয়া অন্যায় এটা সম্ভবত সবাই মেনে নেয়! আপনার যেটা পছন্দ এবং অন্য কারো ক্ষতি করছে না তা করতে না দেয়া কিংবা আপনি করতে না চাইলে আপনাকে কিছু করতে বাধ্য করাকে নিশ্চয়ই আপনি ন্যায় বলে মনে করবেন না? এজন্যই হয়তো ইচ্ছা বা অনিচ্ছার মূল্য না দিয়ে পর্দা করা ও বিভিন্ন বিধান পালন বাধ্যতামূলক করা ইসলামের অনুসারীরাও কেউ পর্দা করতে চাইলে তাকে করতে না দেয়াকে অন্যায় মনে করে। ধর্মে বিভিন্ন বিষয় বাধ্যতামূলক কেন জানতে চাইলে বলা হয় আপনি মুসলিম হলে ধর্মের আইন বিনা প্রশ্নে মানতে হবে আবার যদি ধর্ম ত্যাগ করার স্বাধীনতার কথা বলা হয় তখন দেখা যায় সে স্বাধীনতাও নেই। অর্থাৎ মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলে ধর্ম নামক খাঁচায় আপনি বন্দি এবং সেখান থেকে মুরতাদ হিসেবে হত্যাকান্ডের শিকার হওয়ার ঝুঁকি ছাড়া বের হবার কোনো সুযোগ ধর্মে নেই! এখন প্রশ্ন হলো মুসলিম পরিবারে আপনি কি স্বেচ্ছায় জন্ম নিয়েছেন নাকি আপনার ওপর মুসলিম পরিচয় চাপানো হয়েছে? 

.

আমাদের দেশের কিছু বুদ্ধিজীবী মনে করেন অষ্টম শ্রেণি পাস করা একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান -ব্যবসায় - মানবিক কোন বিভাগ নেওয়া উচিত সেটা বাছাই করার মতো মানসিকভাবে উপযুক্ত হয় না। কথাটায় আসলেই যুক্তি আছে। কিন্তু আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরা সবসময় মূল প্রশ্ন থেকে কোটি আলোকবর্ষ দূরে থাকেন এবং একটা গোষ্ঠীকে খুশি করতে চেষ্টা করেন বা খুশি করতে না পারলেও তাদের বিপক্ষে যায় এমন কিছু বলতে চান না! তাদের প্রশ্ন হতে পারতো একটা শিক্ষার্থী কোন ধর্ম শিখবে বা শিখবে না সেটাও তার মানসিক উপযুক্ততা অর্জিত হওয়ার পর বাছাই করার সুযোগ থাকা উচিত! 

একটা শিশু জন্ম নেওয়ার পর একটা বয়সে তার পরিবারের সামাজিক অবস্থা, আর্থিক সংগতি ও অন্য পারিপার্শ্বিকতার জন্য কেউ বাংলা ভার্সন, কেউ ইংরেজি ভার্সন, কেউ ইংলিশ মিডিয়াম, কেউ আলিয়া মাদ্রাসা, কেউ কওমি মাদ্রাসায় পড়তে হয়, তখন কি তাদের কোথায় পড়া উচিত সেটা বোঝার মানসিক উপযুক্ততা থাকে কিংবা বাছাই করার সুযোগ দেয়া হয়? যেসকল শিশু অভাবের জন্য পড়তে পারে না তাদের সবার জন্য কি সবগুলো অপশন থেকে যেকোনোটা বাছাইয়ের সুযোগ থাকে? জন্মের পর কোনো শিশুকে কি তার ধর্ম নিজে বাছাইয়ের সুযোগ দেয়া হয়? জন্মের পর থেকে একটা শিশুকে ধর্ম সহ বিভিন্ন বিষয়ে বাছাইয়ের কোনো সুযোগই না দেয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা রেখে নবম শ্রেণির বিভাগ পছন্দে লাফ দিয়ে চলে যায় কেন ইনারা?

.

এবার আসি মূল আলোচনায়! জন্মগ্রহণের আগে একটা শিশুকে অপশন দেয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। কোনো সিদ্ধান্তে (জন্মদানের) যার সম্মতি নেয়ার সুযোগ থাকে না অথচ সে ঐ সিদ্ধান্তের জন্য ফল ভোগ করবে এমনক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ঐ সিদ্ধান্ত না নিলে যদি তার কিছু না আসে যায় কিন্তু নিলে ভালো-খারাপ দুইটাই  হতে পারে তখন সে সিদ্ধান্ত না নেয়া!  এখন একজন চোর, সমাজে ঘৃণিত, দরিদ্র, দূর্ণীতিবাজ, অসৎ, ভন্ড, নিষ্ঠুর, বদমেজাজী, জেনেটিকালি রোগাক্রান্ত, অতি খুঁতখুঁতে, গোঁড়া ধার্মিক (এর বাইরে খুব কম লোকই থাকে) লোকের সন্তান হিসেবে একটি শিশুকে জন্ম নেয়া বা না নেয়ার অপশন দেয়া হলে সে কোনটা বেছে নিতো? একজন শিশুকে জন্মের আগে ধর্ম,সমাজ,জীবনসংগ্রাম, অনিশ্চয়তা সহ যা কিছু তার উপর চাপানো হবে সব জানিয়ে তার মতামত নেয়া হলে সে কি জন্ম দেয়ার পক্ষে মত দিতো? যেহেতু এটা জানা অসম্ভব তাই সর্বোত্তম হচ্ছে তাকে জন্ম না দেয়া। 

.

জন্মদানে শিশুর মতামত গ্রহণ না করা গেলেও জন্মদাতা-জন্মধাত্রীর মতামত তো গ্রহণ করাই যায়! তাহলে কি জন্মদান করা বা না করা মানুষের জন্য একটি চয়েজ নয়?

চয়েজ বটে তবে কাউকে খুন করা বা না করার মতোই চয়েজ! নৈতিকতা বিচার করলে কাউকে জন্ম দেয়া কোনো চয়েজ হতে পারে না। 

একটি নিকৃষ্ট উদাহরণ দিই, ধরুন, একজন কোমায় থাকা রোগীর সাথে আপনি সেক্স (যদিও একপক্ষীয় এমন আচরণকে সেক্স বলা যায় কিনা প্রশ্নসাপেক্ষ) করলেন, যেহেতু ঐ রোগীর মতামত দেয়ার সুযোগ নেই তাই আপনি নিজের ইচ্ছাকেই গুরুত্ব দিলেন, রোগী আপনাকে বাধা দেয়নি বা আপনাকে জোরজবরদস্তি করতে হয়নি বলে এক্ষেত্রে কি বলা যায় কোমায় থাকা রোগীর সাথে সেক্স করা না করা আপনার একটা চয়েজ হিসেবেই বিবেচিত হওয়া উচিত?

আপনি সন্তান জন্মদান করে আরো ভয়াবহ কাজ করেন, তার উপর কেবল জীবন নয় ধর্মীয়, সামাজিক, পারিবারিক সহ জীবনসংগ্রাম ও অনিশ্চয়তার বোঝা চাপিয়ে দেন (সে প্রতিবাদ করতে অক্ষম বলে), এরপরেও কি বলা যায় সন্তান জন্ম দেয়া বা না দেয়া কারো চয়েজ হতে পারে? 

.

অন্য কারো জীবনের সিদ্ধান্ত আপনি বা আপনার জীবনের সিদ্ধান্ত অন্য কেউ নেয়া বা না নেয়া কখনোই চয়েজ হতে পারে না এটা মেনে নিলে, কাউকে জন্ম দেয়া বা না দেয়া আপনার চয়েজ হতে পারে কি?


লিখেছেন : 🌹Shams Arko🌹 

শামস অর্কের ব্লগ



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=( ঠিক আছে ) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটটি / মোবাইল অ্যাপ 18 বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের জন্য নয়
Accept !
To Top