(সংযুক্ত ছবি: সিরিয়ার বিখ্যাত কবি ও মুক্তচিন্তক 'আবু আল আ'লা আল মা'রি'র কবর ও কবরে তার স্বরচিত বাক্যে লেখা সমাধিলিপি!)
.
সমাধালিপিটিতে লেখা আছে,
هذا جَنَاهُ أبي عليَّ وَمَا جَنَيتُ عَلَى أَحَدِ
যার অর্থ হচ্ছে, 'এই অপরাধ (জন্ম দেয়ার) আমার বাবা আমার প্রতি করেছিল, কিন্তু আমি কারো প্রতিই করিনি(কাউকে জন্ম দিইনি)!
.
আরবের কবিতা ও মুক্তচিন্তার ইতিহাস যারা জানেন তাদের কাছে 'আল মা'রি'কে নতুন করে পরিচয় করাতে হবে না। কিন্তু এ লেখায় আলোচ্য কেবল তার 'জন্মদানবিরোধ'! আবু আল মা'রি মনে করতেন জীবনের দুঃসহ যন্ত্রণা এড়াতে সন্তান জন্মদান করা উচিত নয়। তাঁর সমাধিলিপির কথাগুলোতে মনে হতে পারে তিনি বাবার প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন, কিন্তু তা মোটেও নয়। তাঁর বাবার মৃত্যুতে শোকাহত কবি রচিত শোক-কবিতা বাবার প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ। তাই তার সমাধিলিপির মূল বক্তব্য আসলে, 'সন্তানকে যন্ত্রণার জীবন দেয়া অপরাধ, অনৈতিক।' ব্যক্তিগত জীবন ও লেখায় নৈতিকতা ও যুক্তিকে প্রাধান্য দেয়া, নির্লোভ (তাঁর কবিতা বিক্রি করে ধনী হতে নারাজ ছিলেন) চিরকুমার এই কবির ভাষায় তাঁর জীবনের দুটি বন্দিশালা ছিলো, তাঁর অন্ধত্ব (ছোটবেলায় গুটিবসন্তে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন) এবং বিচ্ছিন্নতা (একাকীত্ব ও বিচ্ছিন্নতা এক নয়)!
.
ব্যক্তিগত জীবনে নৈতিক কারণে 'নিরামিষভোজী' এই কবির একটি কবিতা না উল্লেখ করলেই নয়:
.
'অনুচিতভাবে পানির মাছ মেরে খেয়ো না,
আর খাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করো না জবাই করা প্রাণীর মাংস,
অথবা (প্রাণী) মায়েদের সাদা দুগ্ধ যা সন্তানের চুমুকের প্রত্যাশায় থাকে, গোয়ালিনীর হাতের টানের নয়,
আর সরলবিশ্বাসী নিরীহ পাখিগুলোর ডিম খেয়ে নিয়ে তাদের শোকাহত করো না,
কেননা কারো প্রতি অবিচারই সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ।
আর ছেড়ে দাও মৌমাছির কঠোর পরিশ্রম করে সুগন্ধি ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধু পান করা,
কেননা অন্যে নিয়ে যাবে বলে এত কষ্ট করে তারা এটা সংগ্রহ করে না,
দান করা কিংবা উপহার দেয়ার জন্যেও সংগ্রহ করে না!
আমি এসব থেকে হাত ধুয়ে নিয়েছি,
তবু মনে হয় যদি আমার চূল ধূসর হওয়ার আগেই আমার এই উপলব্ধি হতো!'
লিখেছেন : 🌹Shams Arko🌹