জন্ম দেওয়া একটি অপরাধ

এক জন্মদানবিরোধী
0
'


না ছিলাম আমি, খোদা ছিলো!
না হতাম আমি, খোদা থাকতো!
ডুবালো আমাকে এই অস্তিত্ব, 
না হতাম আমি, তবে কিইবা হতো?'

মির্জা আসাদুল্লাহ গালিব তাঁর শেষ বয়সে এমন একটি কবিতা লিখে তার অস্তিত্বের যন্ত্রণা তুলে ধরে বলতে চেয়েছিলেন কিইবা হতো যদি তার জন্ম না হতো? কিন্তু তাঁর জীবনে দেখা যায় তিনি সাতটি সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন! (যদিও তারা সবাই শৈশবেই মারা গিয়েছিল) অস্তিত্বের যন্ত্রণাবোধ কিংবা জন্ম নেওয়া আহামরি কিছু নয় এই উপলব্ধি মির্জা গালিবের যে বয়সে এসেছে ঐ বয়সে ইতোমধ্যে তিনি সাতটি সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন, যদি ঐ সন্তানরা বেঁচে থাকতো, তাহলে তিনি আরো সাতজন মানুষকে তাদের অনুমতি/কনসেন্ট ছাড়াই বিনা অপরাধে অস্তিত্বের যন্ত্রণাবোধের শাস্তি দেয়ার দায় এড়াতে পারতেন না! কিন্তু শেষ বয়সে তাকে যদি সন্তান জন্ম দেয়া বা না দেয়ার বিকল্প গ্রহণ করতে বলা হতো, তিনি হয়তো কখনোই সন্তান জন্ম দেয়ার কথা ভাবতেন না। ঠিক একইভাবে আমাদের সমাজে যারা বাবা-মা হচ্ছে তাদের জীবনবোধ/উপলব্ধি এত কম বা মিথকাঠামো/প্রবৃত্তির দাসত্বে এত সীমাবদ্ধ যে তারা সন্তান জন্ম দেয়ার সময় অস্তিত্বের যন্ত্রণাবোধ উপলব্ধি করে না, তাদের যখন উপলব্ধি হয় (সন্তান জন্ম দেয়া/ নিজেই জন্ম নেয়া ভুল ছিলো) তখন আর কিছুই করার থাকে না!
.
'জীবন সবসময়ই একটি নেতিবাচক ব্যাপার!'  এটা বললে হয়তো অপটিমিজমের মিথ-দাসেরা কিংবা জীবনবাদীরা তেড়ে আসবেন আমার দিকে! কিন্তু তারা কি ভেবে দেখেছেন, কাউকে জন্ম না দেয়া কখনোই অপরাধ/অনৈতিক নয়! 'জীবন অনেক সুন্দর' মিথের আড়ালে প্রবৃত্তির দাসত্ব করা লোকেরা বলবেন, এত সুন্দর জীবন থেকে কাউকে বঞ্চিত করা ঠিক? কিন্তু যার অস্তিত্বই নেই তাকে বঞ্চিত করা যায় কি?
.
এবার আসি জন্ম দেয়াকে অপরাধ বলা যায় কি না প্রসঙ্গে! আপনি নিশ্চয়ই মানেন কাউকে জন্ম না দিলে তার অস্তিত্ব না থাকায় তার কিছু যায় আসে না! তাই আপাতত জন্ম দেয়ার ভ্যালু যে শূন্য তা আপনাকে মানতেই হচ্ছে।  কিন্তু কাউকে জন্ম দেয়ার পর যতটা যন্ত্রণা সে জীবনে ভোগ করবে, আপনার তাকে জন্মদানের কাজটির ভ্যালু ততো বেশি ঋণাত্মক বা নেতিবাচক হবে। আপনি হয়তো বলবেন, সে তো কত সুখও অনুভব করবে জীবনে, সেসবের ইতিবাচকতা কেন বিবেচিত হবে না? কিন্তু আগেই বলেছি তার অস্তিত্ব ছিলো না বিধায় এসব সুখ না পেলেও তার কিছু আসতো যেতো না, এছাড়াও কনসেন্ট/অনুমতি নেয়ার সুযোগ না থাকায় আপনি তার ইচ্ছেয় তাকে এ সুখগুলো দেননি, তাই এগুলো তার উপর আরোপিত সুখ, তার আকাঙ্ক্ষিত নয় বলে এটাকে ইতিবাচক বলার কোনো সুযোগ নেই যখন এর সাথে এক বিন্দুও অনাকাঙ্ক্ষিত যন্ত্রণা সে পাবে, যার জন্য কেবলমাত্র তাকে আপনার নিজের স্বার্থে অস্তিত্বে আনার সিদ্ধান্তটাই দায়ী।
.
আপনি যতভাবেই ব্যাখ্যা করেন কাউকে তার স্বার্থে জন্ম দেয়া যায় না কেননা জন্ম না নিলে তার কোনো ক্ষতি নেই কিন্তু জন্ম নিলে একটু হলেও যন্ত্রণাভোগে ভুগবে এটা সবাই জানে! মা বাবার সন্তানের প্রতি ভালোবাসাকে তার (সন্তানের) অনিচ্ছায় তাকে অস্তিত্বের যন্ত্রণা দেয়ার অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত ছাড়া অন্য কিছু মোটেই বলা যায় না! আপনি যদি সত্যিই আপনার অনাগত সন্তানকে ভালোবাসেন, তাকে কাঁটার আঘাত দূরে থাক, ফুলের আঘাতও দিতে না চান তাহলে সবচেয়ে উত্তম/যৌক্তিক উপায় সম্ভবত তাকে জন্ম না দেয়া। কেউ হয়তো বলবেন জন্ম না দিয়ে কিভাবে ভালেবাসা দেখানো যায়? ধরুন, আপনার সন্তানের এখনো পোলিও হয়নি, আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন তাকে পোলিও থেকে রক্ষা করতে আগেই টিকা দিয়ে রাখবেন। এখন কেউ যদি বলে 'সন্তানকে পোলিও টিকা দিয়ে আপনি  আপনার সন্তানের পোলিও হওয়ার পর তাকে সেবা করে তার প্রতি ভালোবাসা দেখানোর সুযোগই রাখলেন না' সেটা হাস্যকর হয়ে যায় না? আপনি যদি চিন্তায় সৎ ও বোধসম্পন্ন হয়ে থাকেন তাহলে হয়তো মানবেন যে, 'দুঃখ এড়াতেই পৃথিবীর মানুষের সব আয়োজন, 'সুখ' এর বিভ্রমে ডুবে থাকার চেষ্টা। '

লিখেছেন : 🌹Shams Arko🌹 

শামস অর্কের ব্লগ



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=( ঠিক আছে ) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটটি / মোবাইল অ্যাপ 18 বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের জন্য নয়
Accept !
To Top