সুখ

এক জন্মদানবিরোধী
0

.

আপনি কি সুখী? যদি আপনি বিবাহিত হয়ে থাকেন, তাহলে প্রশ্ন আসবে আপনি কি বিয়ের আগে সুখী ছিলেন না? যদি আপনার সন্তান থেকে থাকে, তাহলে প্রশ্ন আসবে আপনি কি সন্তান নেয়ার আগে সুখী ছিলেন না? 
.
এমন প্রশ্ন কেন করলাম? আপনি কি জানেন যে 'মানসিক অস্থিরতা' ও 'মানসিক শান্তি' দুটো বিপরীত জিনিস? আপনি একা জন্মেছেন এবং আপনার অনিচ্ছা সত্ত্বেও জন্মসূত্রে বাবা-মা, ভাই-বোন সহ অনেক আত্মীয়-প্রতিবেশী পেয়েছেন! এসব পেয়ে যদি আপনি সন্তুষ্ট হতেন এবং স্থির থাকতে পারতেন, আপনি কখনোই কোনো নতুন সম্পর্কে জড়াতে চাইতেন না। কিন্তু এমনটা মানুষের বৈশিষ্ট্য নয়, মানুষ পরিবার-প্রতিবেশী-আত্মীয় এদের মাঝে থেকেও একা অনুভব করে, তাই সে জীবনসঙ্গী খুঁজে নেয়। জীবনসঙ্গী খোঁজা মানে নিজের একাকীত্ব দূর করার জন্য অপর একটি স্বাধীন সত্ত্বাকে সম্পর্কের শৃঙ্খলে কিছুমাত্রায় হলেও বন্দী করার চেষ্টা।  আমি বলছি না এটা খারাপ, কেননা এক্ষেত্রে যদি আপনার জীবনসঙ্গী প্রাপ্তবয়স্ক ও বোধসম্পন্ন হয় এবং আপনার সাথে সম্পর্কের শৃঙ্খলে থাকা পছন্দ করে, তাহলে আপত্তির কিছু থাকতে পারে না। আমি যেটা দেখাতে চাচ্ছি, সেটা হচ্ছে মানুষ একা, অসুখী ও অস্থির বোধ করে বলেই ভিন্ন একজন স্বাধীন মানুষের স্বাধীনতা খর্ব করে হলেও নিজের একাকীত্ব দূর করতে চায় অর্থাৎ আপাতদৃষ্টিতে সুখী মানুষ বিয়ে করে মনে হলেও প্রকৃত বাস্তবতা হলো একজন একা (কিংবা ভবিষ্যতে একা হয়ে যাওয়ার ভয়ে থাকা), অস্থির এবং অসুখী মানুষই বিয়ে করে! একা সুখে-শান্তিতে থাকতে পারা কোনো মানুষ অন্য মানুষের সাথে শৃঙ্খলিত হতে চাইবে না বলেই আমার মনে হয়!
.
বিয়ের প্রসঙ্গটা আসলে আমার মূল আলোচ্য নয়! মূল আলোচ্য হচ্ছে বিয়ের পরে সন্তান জন্ম দেয়াটা। আমরা সাধারণত প্রেমের সম্পর্কে বলতে শুনি, 'শুধু তুমি পাশে থাকলে আমার আর পৃথিবীতে কিছুই চাই না।' এ কথাটি যে শুধু মানুষের অন্য সম্পর্ক ও চাহিদার জন্য মিথ্যা - কেবল তা নয়, একটি সন্তান জন্ম দিয়ে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ সেটা মিথ্যা প্রমাণ করে! আর যদি আপনি কাউকে কেবল সন্তান জন্মদানের জন্য বিয়ে করে থাকেন তাহলে আপনি মুখে যা ই বলুন, আপনি আপনার জীবনসঙ্গীকে সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র হিসেবেই ভেবেছেন! এবার আবার একটু পিছিয়ে যাই! আপনি যেভাবে জন্মগ্রহণ করেছেন সেভাবে সুখে-শান্তিতে ও স্থির থাকতে না পারায় আপনি বিয়ে করেছেন! এখন আপনি জীবনসঙ্গীর সাথে পরিপূর্ণ সুখে-শান্তিতে থাকলে আপনি ওভাবেই স্থির থাকতে চাইতেন। কিন্তু না, (সন্তান জন্ম না দেয়ার উপায় থাকতেও) আপনি সন্তান জন্ম দিচ্ছেন! কেন? কারণ আপনি আপনার জীবনসঙ্গীকে সবসময় পাশে পাচ্ছেন না বা তার সাথে আপনার সম্পর্ক নিয়ে আপনি পরিপূর্ণ সন্তুষ্ট নয় বলেই বিয়ের পরেও একাকীত্বে, অস্থিরতায় ভুগছেন! সে একাকীত্ব কাটাতে নিজের স্বার্থে একাকীত্ব দূর করার খেলনা হিসেবে একটা নতুন মানুষকে যন্ত্রণার অস্তিত্ব দিচ্ছেন! তাই সৎ উপলব্ধিসম্পন্ন মানুষ হলে সন্তান জন্ম দিয়ে সন্তানের মহা উপকার করেছেন না ভেবে প্রকৃত বাস্তবতা উপলব্ধি করে আয়নায় নিজের স্বার্থপর চেহারাটা দেখুন। আর আপনি যদি বলেন, আপনার ইচ্ছে ছিলো না সন্তান জন্ম দেয়ার, সমাজ ও পরিবারের চাপে বা আঁটকুড়ে-বন্ধ্যা এসব অভিযোগ শুনতে চান না বলে সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য হয়েছেন, তাহলে আপনার ভাবা উচিত আপনি একজন মানুষকে এমন সমাজে আনছেন যেখানে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধেও অনেককিছু করতে হয়!
.
মানুষ একটি উন্নত মস্তিষ্কের সীমাবদ্ধ প্রাণী! মানুষ কোনো কাজ ফল লাভের আশা ছাড়া করতে পারে না। মুখে যতোই উদার, স্বাধীনচেতা বুলি আবৃত্তি করেন আপনার সন্তানের জন্য আপনি প্রত্যাশা ছাড়া কষ্ট করতে পারবেন না, নিজের অজান্তেই আপনার প্রত্যাশার বোঝা চাপিয়ে দিবেন তার উপর। এছাড়া আপনি না চাইলেও সন্তান শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতার বোঝা বয়েই অনেক ত্যাগ মুখ বুঝে স্বীকার করে যাবে, যা আপনি মস্তিষ্ক ব্যবহার করলেই বুঝবেন। বুঝে যদি আপনি আপনার সন্তানকে তার মতোই চলতে দেন তখন সে ভুল করে নিজেও কষ্ট পাবে, আপনিও মনঃকষ্টে ভুগবেন। এছাড়া আপনি জন্ম দিয়েছেন ভেবে আপনার মনে সন্তানের উপর অধিকারবোধ জন্মানোয় আপনি তাকে মারবেন বা বকবেন, জীবনসঙ্গী বা কর্মজীবন ও অন্যান্য হতাশা আপনার সন্তানের উপর চাপিয়ে দিবেন।
.
আপনি হয়তো বলতে পারেন সন্তান জন্ম দেয়া এবং তৎসংশ্লিষ্ট ঘটনাবলী তো একেবারেই প্রাকৃতিক প্রবৃত্তি, সবার জীবনেই ঘটছে, তাহলে আমি বলবো আপনি স্বীকার করুন আপনি অন্য প্রাণীদের মতোই প্রবৃত্তির দাসত্ব করছেন, নৈতিক কিছুই করছেন না। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে আপনি যে উন্নত মস্তিষ্কের অধিকারী, তাতে প্রবৃত্তির দাসত্ব করা মানুষ হিসেবে আপনার জন্য অপমানজনক। আপনি হয়তো বলবেন আমার বাবা-মা আমাকে জন্ম দেয়ার জন্য আমি পৃথিবী দেখেছি, তাহলে আমি কেন আরেকজনকে পৃথিবী দেখার সুযোগ দিবো না? (পৃথিবী দেখার সুযোগ না পেলে যে অস্তিত্বহীন কারো কিছু যায় আসে না কিন্তু অস্তিত্বে আনলে যন্ত্রণায় ভুগতেই হয় সেসব আগে আলোচনা করা হয়েছে।) 
এ প্রসঙ্গে আমি বলবো বাবা-মা আমাকে জন্ম দেয়া অপরাধ ছিলো না কিন্তু তাদের উপলব্ধির সীমাবদ্ধতা অবশ্যই ছিলো। যে কারণে আমাদের পূর্বপুরুষেরা পারমানবিক বোমা আবিষ্কার করলেও আমরা বর্তমানে চাই না সে বোমা ব্যবহৃত হোক, ঠিক একই কারণে আমাদের বাবা-মা আমাদের জন্ম দিলেও অনাগত সন্তানদের সম্ভাব্য যন্ত্রণা উপলব্ধি করে আমাদের সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা ব্যবহার অনুচিত বলে আমি মনে করি।

লিখেছেন : 🌹Shams Arko🌹 

শামস অর্কের ব্লগ



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=( ঠিক আছে ) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটটি / মোবাইল অ্যাপ 18 বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের জন্য নয়
Accept !
To Top