কান্টের দর্শন ও জন্মদানবিরোধ

এক জন্মদানবিরোধী
0

 



কান্টের একটা কথা আছে, মানুষকে মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা অনৈতিক। কান্টের এই কথাটার সীমাবদ্ধতা হলো উনি কেবল মানুষকে মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করাকে অনৈতিক বলেছেন, অন্য প্রাণীদের, বিশেষ করে অনুভূতিশীল প্রাণীদের কথা বিবেচনা করেননি। এখন কথা হলো, কাউকে মাধ্যম হিসেবে চেতন/অবচেতন মনে ব্যবহার করা ছাড়া কোনো মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব কি? আমার সহযোগী এডমিন একটা কথা বলে, মানুষ যদি কখনো বিলুপ্ত হয় সেটা হবে পরিপূর্ণ নৈতিকভাবে বাঁচার চিন্তা করতে গেলে কেননা পরিপূর্ণ নৈতিকভাবে বাঁচা সম্ভব নয়। এই নৈতিকতার চিন্তাই জন্মদানবিরোধের একটি শক্ত ভিত্তি। যন্ত্রণার অনুভূতি আছে এমন প্রাণী খাওয়া বাদ দিলেও উদ্ভিদকে বা প্রাণীজাত খাবারের জন্য প্রাণীকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়া মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। মানুষ চাইলে প্রবৃত্তির অনৈতিক দাসত্ব থেকে মুক্ত হতে পারে আর সেটা করলে বিলুপ্ত হওয়া অবশ্যম্ভাবী! (যদিও আমরা মানুষরা যে পরিমাণ লোভী,স্বার্থপর,অস্থির,ক্ষণস্থায়ী আবেগী ও সংকীর্ণ চিন্তার লোক, তাতে নৈতিকতাকে সবাই গুরুত্ব দিবে এটা প্রায় অসম্ভব!)

.

কান্টের এ কথাটার সাথে জন্মদানবিরোধের সম্পর্ক কোথায়? কান্টের মতানুযায়ী মানুষকে মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা অনৈতিক। সন্তান জন্ম দেয়ার মাধ্যম হিসেবে কাউকে (পুরুষ/স্ত্রী) ব্যবহার করলে সেটাও কি অনৈতিক নয়? যদিও বিবাহ প্রথাটাও কান্টের মতানুযায়ী অনৈতিক কেননা নিজের একাকীত্ব দূর করতে বা যৌন চাহিদা পূরণের জন্য বিয়ে করলে মানুষকে একাকীত্ব দূর করা বা যৌন চাহিদা পূরণের জন্যই ব্যবহার করা হচ্ছে! (এ হিসেবে প্রেমও অনৈতিক বটে, কেননা প্রেমেও অপরপক্ষকে নূন্যতম হলেও ভালোলাগার মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়!) এখানে অবশ্য যদি উভয়ে উভয়কে ব্যবহার করে তাহলে কাজটা নৈতিক না হলেও অন্তত কিছুটা কম অনৈতিক! কিন্তু সন্তান জন্মদানের কাজটি সম্পূর্ণ এবং চরম অনৈতিক। 

.

কিছুদিন আগে একটি নতুন সন্তান জন্ম দিয়ে পূর্ববর্তী সন্তানকে থ্যালাসেমিয়া মুক্ত করার ঘটনা ঘটেছে! এমন ঘৃণ্য,অনৈতিক কাজে দেখলাম অনেকে বাহবা দিয়েছে! একজন মানুষকে কেবলমাত্র অন্য একজনের রোগ ভালো করার মাধ্যম হিসেবে জন্ম দেয়া যাদের বিবেচনায় নৈতিক, জন্মদানবিরোধ তাদের জন্য নয়!

.

একটি শিশুকে জন্ম দেয়ার একটি প্রধান উদ্দেশ্য (অবচেতন) নিজের জিন পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে দেয়া, এক্ষেত্রে শিশুটি কেবল জিন ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে, সন্তানের প্রতি ভালোবাসা নিজের অজান্তেই নিজের জিন রক্ষার তাগিদ ছাড়া কিছুই নয়। এছাড়া সন্তান জন্ম দেয়ার সচেতন উদ্দেশ্যও বংশ রক্ষা, দাম্পত্য সম্পর্ক রক্ষা, বাবা/মা হওয়ার অভিজ্ঞতা লাভ, বৃদ্ধ বয়সের অবলম্বন, একাকীত্ব দূর করা, সন্তানের সফলতায় নিজের অপূর্ণ ইচ্ছে পূরণ সহ যা ই হোক না কেন সবক্ষেত্রেই সন্তান একটি মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কিন্তু সন্তান জন্মদানের চরম অনৈতিকতা হচ্ছে সন্তান যেহেতু জন্মদানের আগে অস্তিত্বশীলই থাকে না তাই জন্মদানে সন্তানের কোনো স্বার্থ থাকে না, তাই সন্তান সম্পূর্ণভাবে আপনার স্বার্থসিদ্ধির একটি মাধ্যম হিসেবেই ব্যবহৃত হয়।


লিখেছেন : 🌹Shams Arko🌹 

শামস অর্কের ব্লগ



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=( ঠিক আছে ) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটটি / মোবাইল অ্যাপ 18 বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের জন্য নয়
Accept !
To Top