ফ্রাংকেস্টাইন, ঈশ্বর ও জন্মদানবিরোধ

এক জন্মদানবিরোধী
0




মেরী শেলীর লেখা ফ্রাংকেস্টাইনে ভিক্টর ফ্রাংকেস্টাইন যেন ঈশ্বরের মতোই নিছক কৌতুহল বসে, নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে সংশ্লিষ্ট সৃষ্টির অনুভূতির কথা না ভেবেই বানিয়ে ফেলেছেন এক দৈত্য মানবকে। ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টির আগে যেমন তার মানুষ সৃষ্টির অভিজ্ঞতা ছিলো না (থাকা অসম্ভব) ঠিক তেমনি ফ্রাংকেস্টাইনেরও ধারণা ছিলো না দৈত্য মানব তৈরির পর কি হতে পারে। ফ্রাংকেস্টাইন অবশ্য তার ভয়ংকর ও কুৎসিত সৃষ্টি দেখে নিজেই তাকে পরিত্যাগ করেছে! আদম ও ফ্রাংকেস্টাইনের দৈত্য মানব উভয়ই ছিলো একা, ঈশ্বর আদমের জন্য লিলিথকে এবং পরবর্তীতে হাওয়াকে সৃষ্টি করেছিলেন সঙ্গিনী হিসেবে কিন্তু দৈত্য মানবের একাকীত্ব দূর করতে ফ্রাংকেস্টাইন কোনো সঙ্গিনী তৈরি করেনি। ফ্রাংকেস্টাইন ভেবেছে যদি দৈত্য মানব তার সঙ্গিনীকে পেয়ে আরো ভয়ংকর হয় কিংবা দৈত্য মানব মানুষের ক্ষতি না করলেও দৈত্য মানবী যদি লিলিথের মতো বিদ্রোহী হয় তখন কি হবে? যে শিক্ষা ঈশ্বর ভুল করে পেয়েছে সে শিক্ষাই ফ্রাংকেস্টাইন দেখে শিখেছে। ফ্রাংকেস্টাইন নিজের ও নিজের প্রিয়জনদের নির্মম মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তার ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করলেও অবিবেচক ঈশ্বর নিজের ভুলের জন্য আদমের উপরই কেবল যন্ত্রণা চাপায়নি, সঙ্গিনীর মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিয়ে সে যন্ত্রণা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিয়েছে। ফ্রাংকেস্টাইন মানুষ হয়ে বুঝতে পেরেছে মানুষ একটা অতৃপ্ত ও অসুখী প্রাণী, দিগন্তের মতো আপাতদৃষ্টিতে সুখকে ছুঁয়ে ফেলা সম্ভব হবে বলে মনে হলেও মানুষ যত বেগে সুখের পেছনে ছোটে, সুখ মানুষের থেকে তত বেগে দূরে যাচ্ছে বলে মনে হয়। কিন্তু ঈশ্বর তো মানুষ নয়, সে মানুষের এই বাস্তব যন্ত্রণা কিভাবে উপলব্ধি করবে? কোটি কোটি মানুষ যন্ত্রণায় ভুগলেও তার কিছু যায় আসে না, মানুষ তার কাছে নিছক খেলার বস্তু ছাড়া কিছু নয়! ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করেও তার কিছু আসে যায়নি, না করলেও তার কিছু এসে যেতো না।

.

এ তো গেলো ঈশ্বর-বিশ্বাসীদের কথা! আসলে তো ঈশ্বর বলে কেউ নেই বা থাকলেও জানার উপায় নেই, সেক্ষেত্রে মানুষের জন্মের, জীবনযন্ত্রণার একমাত্র কারণ মানুষই। ফ্রাংকেস্টাইনের মতো (নিজেরা বাবা-মা হওয়ার) অভিজ্ঞতা লাভের জন্য, সৃষ্টির (সন্তানের) মাধ্যমে অমরত্ব লাভের আকাঙ্খায় মানুষ যন্ত্রণার ধারাবাহিকতা বজায় রাখছে! অথচ ফ্রাংকেস্টাইনের দুর্দশা থেকে কেউ শিক্ষা নিয়ে এ ধারাবাহিকতা বন্ধের কথা ভাবছে না! ফ্রাংকেস্টাইনের দৈত্য মানব যন্ত্রণা থেকে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তার দায় যেমন ফ্রাংকেস্টাইনের তেমনিভাবে মানুষ জীবনের যন্ত্রণাবোধ থেকে যতরকম যন্ত্রণা পায় বা যন্ত্রণা দেয়, তার দায় তাকে অস্তিত্বে আনয়নকারী এড়াতে পারে না, সেটা ঈশ্বর হোক বা বাবা-মা।

.

যারা ফ্রাংকেস্টাইন পড়েও ঈশ্বর এবং বাবা-মায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকে, তাদের উপলব্ধি সম্পর্কে আমার অনেক প্রশ্ন আছে! 


লিখেছেন : 🌹Shams Arko🌹 

শামস অর্কের ব্লগ



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=( ঠিক আছে ) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটটি / মোবাইল অ্যাপ 18 বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের জন্য নয়
Accept !
To Top