সিসিফাস, অর্থহীন পুনরাবৃত্তি ও জন্মদানবিরোধ

এক জন্মদানবিরোধী
0

 



জন্মদানবিরোধের নৈতিক দিক নিয়ে কথা উঠলে প্রথমেই কনসেন্টের প্রসঙ্গ আসে। (যদিও কনসেন্ট থাকলেও সবকাজকে নৈতিক বলা যায় না আবার কনসেন্ট না থাকলেও সব কাজকে অনৈতিক বলা যায় না।) জন্মদানবিরোধ মানে যার অস্তিত্ব নেই তাকে নিয়ে কথা বলা, ফলে অস্তিত্বহীনের কনসেন্ট আছে কিনা জানার উপায় থাকে না। যেসব কাজ করার জন্য কনসেন্ট প্রয়োজন, সেসব কাজ না করার জন্যেও কি কনসেন্ট প্রয়োজন? 

ধরুন, জাহান্নাম সত্য এবং আপনি পৃথিবীতে জন্ম না নিয়ে জন্ম নিয়েছেন জাহান্নামে। জাহান্নামে তীব্র অসহ্য যন্ত্রণা সয়ে বেঁচে আছেন। এখন আপনার যদি সুযোগ থাকে সন্তান জন্ম দেবার, আপনি কি সন্তান জন্ম দিবেন? যদি আপনার জাহান্নামেও সন্তান জন্ম দেয়ার ইচ্ছে হয় তাহলে এই লেখা আপনার জন্য নয়! আর যদি আপনি সন্তান জন্ম না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাহলে কেন কনসেন্ট জানা সম্ভব না হওয়া সত্ত্বেও আপনি জাহান্নামে সন্তান জন্ম দিচ্ছেন না? কেন ভাবছেন না আপনার সন্তান তো জাহান্নামের জীবন উপভোগও করতে পারে, ভবিষ্যতে জাহান্নামের জীবন সুখেরও হতে পারে? কারণ আপনি আপনার অনাগত সন্তানকে ভালোবাসেন। আপনার অভিজ্ঞতা আপনাকে সন্তান জন্ম দিতে বাধা দিবে কেননা আপনি অনেকটা আপনার অনাগত সন্তানের জন্য দূত যে কিনা তার আগে এসে দেখছেন জাহান্নামটা সন্তানের আসার জন্য উপযুক্ত কিনা, উপযুক্ত না হওয়ার পরেও যদি তাকে জাহান্নামে জন্ম দেন তাহলে আপনি আপনার সন্তানের সাথে প্রতারণা করছেন। আপনার সন্তান যদি প্রশ্ন করে জীবন যন্ত্রণাময় হতে পারে জেনেও কেন জন্ম দিয়েছেন তাকে, কী জবাব দিবেন?

.

আপনি বলবেন আপনার সন্তান তো জাহান্নামে জন্ম নিচ্ছে না, পৃথিবীতে তো কেবল কষ্ট নেই, সুখও আছে! দাঁড়ান, নিজেকে প্রশ্ন করুন। পৃথিবীতে আসলেই সুখ আছে? সিসিফাসের প্রচলিত মিথ অনুযায়ী দেবতারা তাকে একই পাথর বারবার উঠানোর মতো নিরর্থক পুনরাবৃত্তিমূলক ও যন্ত্রণাদায়ক সাজা দিয়েছে কিন্তু সে কাজটি তাকে করতেই হলে এই নিরর্থকতায় সুখ খুঁজে সান্ত্বনা পাওয়া ছাড়া উপায় নেই। আমাদের জীবনও কি তেমন নিরর্থক পুনরাবৃত্তি নয়? এই সূর্যের নিচে লক্ষ কোটি বছর আগেও জীব খেয়েছে, ঘুমিয়েছে, রেচন, প্রজনন করেছে, আমরা সেসবের চেয়ে ভিন্ন কি করছি? আপনি মজা করে যে খাবার খাচ্ছেন, আরামে ঘুমাচ্ছেন, ভিআইপি ওয়াশরুমে রেচনকাজ করছেন, সেক্সের আনন্দানুভূতি লাভ করছেন, ঘুরেফিরে এগুলো বারবার করতে বাধ্য হচ্ছেন, এসব আসলে সিসিফাসের পাথর ঠেলে উপরে তোলার বাধ্যবাধকতায় সুখ খুঁজে পাওয়ার মতো নিরর্থকতার সুখ-ভ্রম ছাড়া কিছুই নয়। এই সুখ-ভ্রমে থাকা কেউ যে যন্ত্রণা ভোগে না এমন নয়, প্রতিটি সংবেদনশীল প্রাণীকে শারীরিক,মানসিক যন্ত্রণা ভুগতে হয়।

.

একজন জাহান্নামের অধিবাসী যে কারণে সন্তান জন্ম দিতে চাইবে না, সিসিফাসের সন্তান জন্ম দেয়া বা না দেয়ার সুযোগ থাকলে একই কারণে হয়তো সেও সন্তান জন্ম দিতে চাইতো না। যে নিরর্থক যন্ত্রণাদায়ক জীবনের শাস্তি ভুলতে সে সুখ-ভ্রমে সান্ত্বনা খোঁজে, সে কেন তেমন জীবন অন্য কাউকে চাপিয়ে দিবে? অথচ মানুষ জীবনের নিরর্থকতাকে যে কেবল যে সুখ-ভ্রমে ভুলে থাকে সেটাই নয়, একই নিরর্থক পুনরাবৃত্তির জীবন তার সন্তানের উপর অপরাধবোধ ছাড়াই চাপিয়ে দিচ্ছে। সিসিফাসের মতো যে নিরর্থক পুনরাবৃত্তি ও যন্ত্রণার জীবন মানুষের উপর চাপানো হয়েছে/ চেপে আছে তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় বিদ্রোহ হতে পারে অনাগতদের এই অর্থহীন পুনরাবৃত্তি ও যন্ত্রণার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে জন্ম না দেয়া।


লিখেছেন : 🌹Shams Arko🌹 

শামস অর্কের ব্লগ



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=( ঠিক আছে ) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটটি / মোবাইল অ্যাপ 18 বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের জন্য নয়
Accept !
To Top